একজন বিবি রাসেল।
বিবি রাসেল একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশী ফ্যাশন মডেল এবং নকশাকার। তিনি একজন মডেল হিসেবে ইউরোপে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
জনপ্রিয়তার যাত্রা:
১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে লন্ডন কলেজ অব ফ্যাশনে পড়তে যান। একই সঙ্গে শুরু করেন মডেলিং। ১৯৭৫ সালে নিজের স্নাতক প্রদর্শনীতে ১০টি নতুন ডিজাইনের পোশাক প্রদর্শন এবং নিজেই মডেলিং করে হৈচৈ ফেলেন। এরপর বাংলাদেশের বিবিকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
পোশাকে বৈচিত্র্য ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটানোর কারণেই তিনি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। তখন থেকেই তিনি বিভিন্ন নামকরা ম্যাগাজিনের ফ্যাশন মডেলসহ ২০ বছর কাজ করেন পৃথিবীর সব নামি-দামি ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে।
মডেল:
বিবি প্রথমে যাত্রা শুরু করেন ছবির মডেল হিসেবে। বিবির মডেলিং ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি ভোগ, হারপার’স বাজার এবং কসমোপলিটনের শীর্ষস্থানীয় মডেল ছিলেন। হয়েছেন বিশ্বের অনেক প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের মডেল।
আন্তর্জাতিক কোম্পানির সাথে বিবি:
বিবি আন্তর্জাতিক ভাবে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডেড কোম্পানির মডেল হয়েছেন। তার মধ্যে- কোডাক, কোকো শ্যানেল, বিএমডাব্লিউ, ইভস সেন্ট লরেন্ট, টয়োটা, কার্ল লেগার ফিল্ড, জর্জিও আরমানিসহ আরো অনেক ব্র্যান্ডের নাম আছে সেই তালিকাতে।
সুপার স্টারদের সাথে বিবি:
বিবি শুধু ব্র্যান্ডেড কোম্পানির মডেল হয়েছেন তাই নয়; ক্যাটওয়ার্ক করেন নাওমি ক্যাম্পবেল, কদিয়া শিফারের মতো সুপার স্টার মডেলদের সঙ্গে।
বিশ্বসেরা সেলিব্রেটি ডিজাইনার স্টেলা ম্যাকার্থি, ভিভিয়েন ওয়েস্টউড এবং সাফিয়া মিনি্নর মতো খ্যাতিমান ফ্যাশন ডিজাইনারের নামের সঙ্গে উঠে আসে তার নাম।
বিবি এখন বাংলাদেশে:
জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে দেশীয় বস্ত্র ও হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করার ইচ্ছায় বিবি রাসেল স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে ফিরে আসেন ১৯৯৪ ১৯৯৫ সালের ১৩ জুলাই দেশে গড়ে তোলেন বিবি প্রোডাকশন।
বিবি প্রোডাকসের মাধ্যমে দেশের ফ্যাশন, বস্ত্রশিল্প ও হস্তশিল্প উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু দেশেই নয় ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, ডেনমার্ক ও কম্বোডিয়ার তাঁতীদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি।
ইউনেসকোর সহায়তায় তিনি ইউরোপে তিনটি বড় শো করেন। প্যারিস প্রদর্শনী থেকে যে অর্ডার তিনি পেয়েছিলেন, তাতে বাংলাদেশের প্রায় ৩০ হাজার তাঁতির কর্মসংস্থান হয়েছে তখন। গ্রামীণ তাঁতিদের দক্ষতার সঙ্গে বিবি সংযুক্ত করেছিলেন বৈশ্বিক রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী নকশা ও ব্যতিক্রমী সব ডিজাইন। তার প্রচেষ্টায় বিশ্ববাসীর কাছে বাংলার তাঁতিদের কাজের চাহিদা এখন ব্যাপক।
কাজের স্বীকৃতি:
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিবি রাসেল দেশে-বিদেশে নানা স্বীকৃতি ও সম্মাননা পেয়েছেন। তার মধ্যে কয়েকটি:
১. ১৯৯৭ সালে এলে ম্যাগাজিন তাকে 'উইমেন অব দি ইয়ার' ঘোষণা করে।
২. ১৯৯৯ সালে লন্ডন ইন্সটিটিউট তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দিয়েছে।
৩. ১৯৯৯ সালে 'বছরের সেরা নারী উদ্যোক্তা' হিসেবে ঘোষণা করে ফাউন্ডেশন অব এন্টারপ্রেনর উইমেন।
৪. ইউনেস্কোর 'বিশেষ শুভেচ্ছা দূত: ডিজাইনার ফর ডেভেলপমেন্ট' খেতাবে ভূষিত করে।
৫. ২০০১ সালে ইউনেসকো তাকে ‘শান্তির শিল্পী’ পদক দেয়।
৬. ২০০৪ সালে স্পেনের জাতিসংঘ সমিতির শান্তি পুরস্কার পান বিবি।
৭. ২০০৮ সালে ইউএনএইডস-এর শুভেচ্ছাদূত।
৮. বিবি রাসেল বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো,
৯. ২০১০ সালে স্পেনের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘দ্য ক্রস অব অফিসার অব দি অর্ডার অব কুইন ইসাবেলা’ পেয়েছেন বিবি।
১০. ২০১১ সালে নিউইয়র্ক থিওলজিক্যাল সেমিনার থেকে 'আরবান এঞ্জেল অ্যাওয়ার্ড' পেয়েছেন।
১১. জার্মানির ভিশন সামিট থেকে 'ভিশন অ্যাওয়ার্ড-২০১১ পেয়েছেন তিনি।
১২. নিউ ইয়র্ক থিওলজিক্যাল সেমিনারি থেকে ‘আরবান অ্যাঞ্জেল অ্যাওয়ার্ড-২০১১ পেয়েছেন বিবি।
১৩. তাঁতশিল্পে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য ‘আইসিটিএ ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড-২০১২ পেয়েছেন।
১৪. ২০১৫ সালে তিনি রোকেয়া পদকে ভূষিত হোন।
পড়া শোনা:
তিনি বাংলাদেশে "গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ" এর বস্ত্র ও বয়ন শিল্প বিভাগ থেকে পড়াশোনা করেছিলেন।
No comments