ডাই(DyE) নিয়ে যত কথা।

তন্তু থেকে বস্ত্র তৈরির বিভিন্ন ধাপের যেকোনো ধাপে রং প্রয়োগ করে বস্ত্র বা পোশাককে অনেক আকর্ষণীয় ও মনোরম করে তোলা যায়।
রঙের শ্রেণীবিভাগ :
রং দুই ধরনের। যেমন-
ক.প্রাকৃতিক বা আসল রং (Natural Dye)
মানুষ পোশাকে বৈচিত্র্য আনার জন্য কাপড়ে রঙের ব্যবহার শুরু করে।বস্ত্রে রং করার প্রচলন আদিকাল থেকে চলে আসছে।যখন কৃত্রিম রং আবিষ্কার হয়নি,তখন মানুষ প্রাকৃতিক দ্রব্যাদি থেকে রং আহরণ করত। তখন গাছের ফুল,ফল,পাতা,মূল-কান্ড,বাকল ইত্যাদি থেকে যে রং আহরিত হতো সেগুলোর নাম উদ্ভিজ্জ রং(Vegetable Dye)। শেফালি, পলাশ,কুসুম ইত্যাদি ফুল থেকে এ রং তৈরি হয়।পান খাওয়ার জন্য যে খয়ের ব্যবহৃত হয় তা থেকেও রং পাওয়া যায়।বিভিন্ন প্রাণিজ,খনিজ দ্রব্য ইত্যাদি প্রাকৃতিক বস্তু বস্ত্র রঞ্জনের কাজে ব্যবহৃত হতো।যেমন-রেশম ও পশমের জন্য কোচিনি ট্রেপ,লাক্ষ্য ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।এদের নাম প্রাণীজ রং(Animal Dye) উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ উৎস ছাড়া ধাতব উৎস থেকে যে রং পাওয়া যায় এদের নাম ধাতব রং।যেমন-প্রুশিয়ান নীল,ক্রোম হলুদ ইত্যাদি।
খ.কৃত্রিম রং (Artificial Dye)
কৃত্রিম রংগুলোকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়-
১।অম্ল বা এসিড ডাই (Acid Dye)
সিড ডাই কতগুলো অম্ল বা এসিডের রাসায়নিক লবন দ্বারা গঠিত। সুতা বা বস্ত্র রং করার সময় বিভিন্ন রকম এসিড ব্যবহার করা হয় বলে এ জাতীয় রং কে এসিড ডাই বলে।নাইলনন,ওরলন ইত্যাদি। সাংশ্লেষিক,রেশম ও পশম তন্তু রংকরনের ক্ষেত্রে এসিড ডাই ব্যবহার করা হয়।বস্ত্রাদি রং করার সময় রঞ্জক দ্রব্যের সাথে হাইড্রোক্লোরিক অথবা লঘু অ্যাসিটিক এসিড ব্যবহার করা হয়।বাণিজ্যিকভাবে রংকরনের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।বস্ত্র শিল্পে এ জাতীয় রঙকে বাণিজ্যিক রং বলে।
২।ক্ষার জাতীয় বা ব্যাসিক ডাই
এটি প্রথম আবিষ্কৃত কৃত্রিম রং। ক্ষার জাতীয় রং সুতি,লিনেন,রেয়ন,রেশম ও পশম বস্ত্র রংকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।এ জাতীয় রং বাজারে পাউডার বা দানা আকারে পাওয়া যায়।রং যাতে পানিতে সহজে দ্রবীভূত হয় সেজন্য অ্যাসিটিক এসিড বা ফিটকিরি ব্যবহার করা হয়।
৩। ডাইরেক্ট বা প্রত্যক্ষ রং(Direct Dye)
সুতি বা লিনেন এবং রেয়ন তন্তুতে কোনো মরড্যান্ট বা আস্তর জাতীয় রং ছাড়া যে রংগুলো সরাসরি প্রয়োগ করা হয় তাদের ডাইরেক্ট ডাই বলে।সুতি তন্তুর উপর এ ধরনের রং পাকা হয়না। ধোয়ার সময় রং সহজে উঠে যায়, আলোতে এর উজ্জ্বলতা থাকেনা।আলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য প্রকৃত রং করার পর তুঁতে এবং অ্যাসিটিক এসিডগুলো ১৫-২০ মিনিট সুতা বা বস্ত্রটি সিদ্ধ করতে হয়।
৪। ন্যাপথল বা এজোইক রং(Azoic Dye)
এই জাতীয় রং পাকা হয়। সুতি বস্ত্র রং করা ও ছাপার কাজ করার সময় এই রং ব্যবহৃত হয়।এই পদ্ধতিতে কাপড়টি প্রথমে ন্যাপথলে ডুবিয়ে পরে ডায়োজোটাইড এর দ্রবনে ডোবানো হয়।রং করার পর কাপড়টি কয়েকবার সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয়।
৫।পিগমেন্ট রং (Pigment Dye)
পিগমেন্ট রং ছাপার কাজে ব্যবহার করা হয়। এই রং তৈরিতে জৈব দ্রবনের সাথে সংশ্লেষিক পিগমেন্টের দ্রবন ব্যবহার করা হয়।
৬।ভ্যাট রং (Vat Dye)
সুতি,লিনেন ও রেয়ন বস্ত্রে প্রয়োগ করা হয়।ভ্যাট রং তিন ধরনের-- নীল ভ্যাট,অ্যানথ্রাকুইনোন ভ্যাট এবং সালফার ভ্যাট।বর্তমানে এ রং পাউডার হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়।এই রং সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড ও কস্টিক সোডার মিশ্রণের সাহায্যে পানিতে দ্রবীভূত করে বস্ত্রে প্রয়োগ করা হয়।সুতি কাপড়ে ভ্যাট রং বেশ পাকা হয়। ঠান্ডা পানিতে ভ্যাট মিশানো যায় না।গরম পানিতে মেশাতে হয়।এজন্য রেশমি কাপড়ে এ রং প্রয়োগ করা যায়না।তীব্র ব্লিচের সংস্পর্শে আসলে এ রং নষ্ট হয়না এবং পানিতে দ্রবীভূত হয়না।
৭।ভেজিটেবল ডাই (Vegetables Dye)
গাছগাছালি, লতাপাতা বা ফলমূল দিয়ে যে রং তৈরি করা হয় তাকে ভেজিটেবল রং বা উদ্ভিদ জাতীয় রং বলা হয়।
৮।ডেভেলপড ডাই(Developed Dyes)
ডেভেলপড ডাই বা বিকশিত রং সুতি লিনেন,রেয়ন অ্যাসিটেট কাপড়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।ধোয়ার পর এ রং খুব একটা নষ্ট হয় না।কিন্তু আলোর প্রভাবে রং সামন্য হালকা হয়ে যায়।
কতগুলো ডাইরেক্ট ডাই আছে যা বিশেষ কতকগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে রুপান্তর করে বেশ পাকা করা হয়।এ রুপান্তর করনকে Diazotising and developing  বলা হয়।
এ রঞ্জক বেশি ব্যয়বহুল।তাছাড়া ডায়োজোটাইজড রং বেশ দামি। ডায়োজোটাইজড রং প্রয়োগ করার সময় প্রথমে তন্তু বা বস্ত্রকে রঙের দ্রবনে ডুবাতে হয়।এরপর রঙের দ্রবন থেকে তুলে বস্ত্রকে ভালোভাবে ঝেড়ে সোডিয়াম নাইট্রেট এবং হাইড্রোক্লোরিক বা সালফিউরিক এসিড এর ঠান্ডা দ্রবনে নিমজ্জিত করতে হয়।এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডায়োজোটাইজিং।এরপর বস্ত্রটিকে একটি ডেভেলপার দ্রবনে ডুবানো হয়। এ পদ্ধতিতে সাধারণত বিট ন্যাপথল,আলফা ন্যাপথল বা ফেনল ডেভেলপর হিসেবে কাজ করে।
@ Saikat Hossen Shohel
   E-mail: saikatsh7@gmail.com

1 comment:

  1. Instant Kaporer rong kothay kinte paowa jay?kalo rong ki kinte paowa jay?

    ReplyDelete

Powered by Blogger.