প্রেজেন্টেশন দেয়ার এক কুড়ি টিপস।

অন্যদের প্রেজেন্টেশন দেখতে গেলে আপনি যেমন দুই-তিন মিনিটে বোরর্ড হয়ে যান, আপনার প্রেজেন্টেশন দেখলে তাদেরও একই ফকিরা মার্কা ফিলিংস হয়। স্পেশালি যারা ফার্স্ট টাইম প্রেজেন্টেশন দিতে যায়। তাই, প্রথমবার প্রেজেন্টেশন দিতে যাওয়া পোলাপানদের জন্য এক কুড়ি টিপস -

১. প্রেজেন্টেশনের আগের রাত্রে রিপোর্ট থেকে লম্বা লম্বা লাইন কপি-পেস্ট মেরে পাওয়ারপয়েন্টের স্লাইড বানানো যাবে না। আপনি যাদের সামনে প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন তারা সবাই পড়তে জানে। সো, একটা স্লাইডের মধ্যে গাদাগাদা টেক্সট দিয়ে রোবটের মত পক পক করে রিডিং পড়া যাবে না। স্লাইডে থাকবে কোন একটা বিষয়ের ইম্পরট্যান্ট পয়েন্টস গুলার কিওয়ার্ড সহ হিন্টস। যাতে ঐসব হিন্টস দেখলে আপনি ওই পয়েন্ট নিয়ে দুই-তিন লাইন কথা বলতে পারেন।

২. অবশ্যই ফাইভ বাই ফাইভ রুল ব্যবহার করতে হবে। কোন স্লাইডে ৫ টার বেশি বুলেট পয়েন্ট দেয়া যাবে না। আর কোন পয়েন্টে পাঁচটার বেশী শব্দ থাকতে পারবে না।

৩. মনে রাখবেন আপনি কি বলতে চান, আপনার কাছে কি ভালো লাগতেছে সেটা বলার জন্য আপনি প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন না। বরং আপনার সামনে দর্শক যারা থাকবে, তারা কি কি শুনতে চায়, তাদের কি জানা প্রয়োজন, সেটা বলার জন্য আপনার প্রেজেন্টেশন। হয় দর্শকদের ভিতরে একটা ইন্টারেস্ট তৈরী করবেন অথবা তাদের ইন্টারেস্টের লাইনে গিয়ে কথা বলবেন। শুধু আপনার পছন্দের জিনিস নিয়ে ইচ্ছামত বলা শুরু করলে দেখবেন পাঁচ মিনিটেই পাবলিক ঘুমায় পড়ছে।

৪. কোন একটা নিউজের হেড লাইন ইন্টারেস্টিং হইলে আমরা লিঙ্কে গিয়ে সেই নিউজ দেখি। নইলে ক্লিক করি না। আপনার প্রেজেন্টেশনের টাইটেল বা এজেন্ডা বা প্রথম দুই স্লাইড ইন্টারেস্টিং না হইলে, আপনি কি বলতেছেন কারো কানে ঢুকবে না। টেবিলের নিচে মোবাইলে ফেইসবুকিং করতে থাকবে। আর মাইনসের ইন্টারেস্ট ধরে রাখার জন্য একটু পর পর আকর্ষণীয় কিওয়ার্ড জোরসে বলা লাগবে। স্টিভ জবস যেমন ব্যবহার করতো, Incredible, Stunning, Fantastic, Gorgeous, etc.

৫. দয়া করে তিন সারি তিন কলামের চাইতে বড় কোন টেবিল দিবেন না। একান্তই বড় টেবিল দেয়া লাগলে, কোন জায়গাটায় এটেনশন দেয়া উচিত সেখানে বোল্ড করে, ফন্ট সাইজ বাড়িয়ে বা লাল কালার সার্কেল দিয়ে হাইলাইট করে দিবেন যাতে এটেনশন ওইখানে চলে যায়। পারলে টেবিলের কম গুরুত্বপূর্ণ সারিগুলার কালার ফেইড করে দেন।

৬. দশ মিনিটের বকর বকর, একটা সিম্পল চার্ট দিয়ে সহজেই দুই মিনিটে বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব। তবে হিজিবিজি মার্কা কোন চার্ট দিবেন না, যেটা আপনি নিজেই ঠিক মত বুঝেন না। বেশি কমপ্লেক্স কোন চার্ট দেয়ার রিস্ক হচ্ছে, কেউ প্রশ্ন করলে ধরা খেয়ে যাবেন। ইনফ্যাক্ট স্লাইডে এমন কোন কিছু দেয়া উচিত না যেটা নিয়ে প্রশ্ন করলে আপনি ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না। ধরা খাইলে আপনি যতটুকু জানেন সেটা নিয়েও লোকজনের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে।

৭. মিনি মিনি টেক্সট বা খুব বড় ফন্ট দিবেন না। ফন্ট সাইজ ২৪ হইলে ভালো। ১৮ এর কম বা ৪০ এর বেশি দিবেন না। Times New Roman ফন্ট হিসেবে ব্যবহার না করে Tahoma, Georgia ব্যবহার করতে পারেন। তবে ইয়ো ইয়ো মার্কা ফন্ট থেকে দূরে থাকবেন।

৮. নতুন নতুন প্রেজেন্টেশন শিখলে পোলাপান অপ্রয়োজনীয় এনিমেশন দেয়, এক এক শব্দ এক এক দিক লাফাইতে লাফাইতে আসে। এই রকম করলে, প্রেজেন্টেশনের মেইন টপিকের দিকে কনসেন্ট্রেশন দেয়া টাফ হয়ে যায়। তবে কোন কমপ্লেক্স কনসেপ্ট এক্সপ্লেইন করার দরকার হইলে সিম্পল এনিমেশন ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বুঝানো অনেক সহজ হয়ে যায়।

৯. অনেকেই সময় মত প্রেজেন্টেশন শেষ করতে পারে না। লাস্টের দিকে এসে এক মিনিটে ছত্রিশ স্লাইড লাফ মারে। আগে থেকে প্রাকটিস করে গেলে এবং প্রশ্ন উত্তরের জন্য কিছু সময় বরাদ্ধ রাখলে এই সমস্যা কম হয়। আর কেউ যদি প্রশ্ন করে বসে এবং সেটার উত্তর মনে করার জন্য আপনার কিছুক্ষণ চিন্তা করা দরকার হইলে, উনাকে বলেন, প্রশ্নটা রিপিট করতে। তাইলে প্রশ্নের উত্তর হিসেবে কি বুজুংবাজুং দিবেন সেটা ঠিক করতে এক দেড় মিনিট এক্সট্রা সময় পেয়ে যাবেন।

১০.কোন একটা জিনিসের কালার ল্যাপটপে যতই ভালো দেখাক না কেনো, প্রজেক্টরে ফালতু দেখাবেই। গ্যারান্টি। স্পেশালি ব্যাকগ্রাউন্ড কালার। তাই খুব বেশি কালারের শেড নিয়ে গবেষণা না করে, বেসিক কালার ব্যবহার করেন। পারলে আগে ভাগে প্রজেক্টরে গিয়ে প্রেজেন্টেশন চালায় দেখেন কালারগুলার কি অবস্থা।

১১. প্রেজেন্টেশন দেয়া একটা স্টোরি বলার মত। একটা ফ্লো থাকবে। মাঝখানে ক্লাইম্যাক্স থাকবে। প্রবলেম থাকবে। সেটার ফিনিশিং দিবেন, লাস্টে। এইভাবে ফ্লো ঠিক না থাকলে, প্রেজেন্টেশনের মাঝখানে লোকজন ঘুমায় পড়বে।

১২. প্রেজেন্টেশন দিতে গেলে দুনিয়ার সবাই নার্ভাস থাকে। বুকের ভিতর দুরু দুরু করতে থাকে। এক এক জন এক এক সিস্টেমে নার্ভাসনেস দূর করার চেষ্টা করে। আমি, প্রেজেন্টেশনের আগে, একটু বাইরে হেটে আসি, পাঁচ মিনিট বাথরুমে গিয়ে মুখে পানি দেই অথবা সামনের সারির লোকজনের সাথে হাই হ্যালো করি। তবে ঠাণ্ডা কিছু খাই না, গলা বসে যাবে বা ঘন ঘন বাথরুম চাপবে এই ভয়ে।

১৩. প্রেজেন্টেশন ইফেক্টিভ করার জন্য কন্টেন্ট এর চাইতে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পকেটের ভিতরে বা বুকে হাত শক্ত করে রাখবেন না। দুই সাইডে রাখবেন এবং একটু পর পর হাত নাড়াবেন। এক জায়গায় স্থির না থেকে একটু ডাইনে বামে নাড়াচাড়া দিবেন। ইত্যাদি এর হানিফ সংকেত দাড়িয়ে যখন কথা বলতে তখন সাউন্ড অফ করে দেখবেন তার হাত পা নাড়ানোর স্টাইল, মুখের ভঙ্গি। এইসব। আর অবশ্যই পকেট হান্ডেড পার্সেন্ট খালি রাখতে হবে। কোন মোবাইল, মানি ব্যাগ, চাবি রাখা যাবে না।

১৪. মরার মত একই স্বরে কথা বলবেন না। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে চাইলে সেটার আগে দম নিয়ে উচ্চস্বরে বলতে হবে, তাইলে যারা শুনতেছে তাদের মনোযোগ বাড়বে। টিভিতে খবর শুনার সময় টিভির দিকে না তাকিয়ে শুধু অডিও শুনলে বুঝতে পারবেন যারা খবর পড়ে তারা কখন কোন শব্দের উপর জোর দিয়ে খবরগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলে।

১৫. দর্শকদের পশ্চাদদেশ দেখিয়ে সারাক্ষণ প্রোজেক্টরের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। ওরা আপনাকে দেখতে আসছে, আপনার পিছনের অংশ না। আবার সর্বদা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকেও তাকিয়ে কথা বলবেন না। একটু পর পর দর্শকদের দিকে তাকান। আই কন্ট্রাক্ট করেন। সেটা মোটামুটি ৩ সেকেন্ড পরে সরায় ফেলেন। এবং দুই-এক মিনিট পরে আরেকজনের সাথে আই কন্ট্রাক্ট করেন।

১৬. আ, উ, গাই, গুই, লাইক, আই মিন, ইউ নো, এইসব টাইপের শব্দ করে অনেকেই। এইসব শব্দ করে, মনে করার চেষ্টা করে, পরবর্তীতে কি বলবে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, নিজের অজান্তেই আমরা এইসব শব্দ করি। এইগুলাকে বলে ফিলার ওয়ার্ড। প্রেজেন্টেশন প্রাকটিস করলে, এইসব ফিলার ওয়ার্ড কমে যায়। আবার অনেকের মুদ্রাদোষ থাকে, একই শব্দ বার বার বলে, প্রাকটিস করে সেটাও কমানো যায়। আর কখনো মনে করার দরকার হইলে, এক দুই সেকেন্ডের জন্য দম নিবেন এবং চুপ থেকে চিন্তা করবেন। এই বিরতি লম্বা সময়ের জন্য নেয়া যাবেনা।

১৭. প্রেজেন্টেশনে কারা থাকবে তারা আপনি যে জিনিস নিয়ে কথা বলবেন সেটা কতটুকু জানে, তা আগে থেকেই জেনে নিতে হবে। নইলে ওরা জানে এমন কিছু নিয়ে আপনি অনেক সময় বকবক করে বোরর্ড করে ফেলবেন। আবার উল্টাটাও ঘটতে পারে, ওদের তেমন ধারণা নাই, আর আপনি ব্যাকগ্রাউন্ড কোন ধারণা না দিয়েই মেইন পয়েন্টে চলে গেলেন। তারা আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না।

১৮. আপনার প্রেজেন্টেশন তৈরী করার সময়, আপনার প্রেজেন্টেশনের মেইন তিনটা ইম্পরট্যান্ট পয়েন্ট খুঁজে বের করতে হবে। যেই তিনটা পয়েন্ট আপনি মনে করেন ওদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের মনে রাখা উচিত। সেই তিনটা পয়েন্ট আপনার প্রেজেন্টেশনের প্রথমে, মাঝে ও শেষে রাখতে হবে। এবং লাস্ট স্লাইডে এই তিনটার একটা সামারি স্লাইড রাখতে হবে। এই ইম্পরট্যান্ট জিনিসগুলা বলার সময় গলার স্বরের ভেরিয়েশন এনে একটু জোড়ে বলতে হবে। যাতে দর্শক আকর্ষণ অনুভব করে।

১৯. আজ থেকে ছয় মাস পরে কেউ আপনার প্রেজেন্টেশনের সবকয়টা স্লাইড মনে রাখবে না। আপনি নিজেও মনে রাখতে পারবেন না। তবে যদি কোন একটা জিনিস মনে রাখতে হয়, তাইলে সেটা কি? আপনি কি জানেন সেটা কি? না জানলে সেটা খুঁজে বের করেন। এবং সেটা জাস্টিফাই করার জন্য প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন যোগ করেন।

২০. শেষকথা হচ্ছে, প্রাকটিস। দরকার হইলে ভিডিও ক্যামেরা বা ওয়েবক্যাম দিয়ে আপনার প্রেজেন্টেশনের ভিডিও করেন। তারপর সাউন্ড অফ করে দেখেন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজের কি অবস্থা। চোখ বন্ধ করে শুধু অডিও শুনে, চেক করেন উচ্চারণের ভেরিয়েশন আছে নাকি। কথা বলার ফ্লো আকর্ষণীয় হচ্ছে কিনা। প্রাকটিসের কোন বিকল্প নাই। ম্যান ইজ মরটাল।

সঙ্গেই থাকুন::

হুট হাট করে মাঝে মধ্যে লেখা আসবে।

AnY QuerY :
E-mail: saikatsh7@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.