ডেনিম রপ্তানিতে চীনকে ছাড়িয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ।


ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে ডেনিম বা জিন্‌স রপ্তানিতে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এই বাজারে ডেনিম রপ্তানিতে আগে চীনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মধ্যে দেশ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্য অর্জনে এটি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত বছর জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ২৮ দেশের বাণিজ্য ব্লকটিতে ৫৬৭ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের ডেনিম পণ্য বাংলাদেশ থেকে গেছে। এর ফলে ইইউ’র ডেনিম বাজারের ২১ দশমিক ১৮ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে আসে যা ছিলো ওই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশি ডেনিম পণ্যের এই সাফল্য শুধু ইউরোপের বাজারেই নয়। যুক্তরাষ্ট্রেও ডেনিম রপ্তানিতে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এখন সেখানে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে চীন ও মেক্সিকো।

ওই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১৮৬ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গেছে। দেশটির ডেনিম বাজারে ২৬ দশমিক ০৪ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে চীন শীর্ষে আর মেক্সিকোর দখলে রয়েছে ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ বাজার। ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

একসময় দেশের সুলভ শ্রমের ওপর ভর করে পোশাক খাত এগুলেও ডেনিম রপ্তানিতে অগ্রগতির মূল কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে কারখানাগুলোতে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারকে। প্রযুক্তিতে অগ্রগতির জন্য প্রচুর বিনিয়োগও করেছেন এখানকার উদ্যোক্তারা।

দেশের অন্যতম শীর্ষ ডেনিম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন জানান, দেশে বর্তমানে ৩০টি ডেনিম কারখানা রয়েছে। এগুলোতে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন উদ্যোক্তারা। কারখানাগুলোর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা সব মিলিয়ে প্রায় ৪৩ কোটি ৫০ লাখ গজ।

ডেনিম উৎপাদনকারী আরেক প্রতিষ্ঠান অ্যাম্বার ডেনিমের অপারেশনস বিভাগের পরিচালক এমএস হাসান জানান, “দামে সস্তা হওয়ার কারণেই শুধু বাংলাদেশের ডেনিম ইউরোপের বাজারে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তা নয়। উন্নত মান, স্বল্প সময়ের মধ্যে উৎপাদন (লিড টাইম) ও প্রতিশ্রুতি মত পণ্য সরবরাহ রপ্তানি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।”

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, “টেস্টিং ও সার্টিফিকেশনে আধুনিক একটি ডেনিম ল্যাবরেটরির জন্য অ্যাম্বার ডেনিম বড় বিনিয়োগ করেছে। এটি আমাদের লিড টাইম কমাতে সাহায্য করেছে।”

বাংলাদেশি ডেনিমের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। ডেনিম ব্যবসা সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ মানুষ নিয়মিত ডেনিম পণ্য ব্যবহার করেন। যে কোন সময় তাদের কাছে গড়ে অন্তত সাতটি ডেনিম পণ্য পাওয়া যায়। আর ইউরোপে সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি হলো যুক্তরাজ্য। সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তির ঘরে অন্তত গড়ে ১৭টি ডেনিম পণ্য থাকে।

বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে লিভাইস, ডিসেল, জি-স্টার র, এইচ এন্ড এম, ইউনিক্লো, টেসকো, র‍্যাংলার, এস অলিভার, হিউগো বস, ওয়ালমার্ট ও গ্যাপ বাংলাদেশ থেকে ডেনিম আমদানি করে।

No comments

Powered by Blogger.