Banana Textile Fiber
কলা গাছ থেকে কাপড়ের সুতা!! এখনকার অনেক টেক্সটাইল লার্নাররা ভাবেন জিন্সেই বোধহয় শক্ত টেকসই কাপড়। আসলে এটা পুরোটাই ভুল ধারণা।
এমন অনেক Natural Fiber ই আছে যেটা জিন্স থেকে শত-গুন টেকসই, এর মধ্যে Banana Fiber অন্যতম।
আসলে আমেরিকানরা তাদের আবিষ্কৃত জিন্স কে মারাত্মক ভাবে প্রচার করার ফলেই এটা ঘটেছে। কি আর করবে? তাদের দেশে তো আর আমাদের দেশের মত এত বেশি কলাগাছ নাই।
অনেকেই হয়তো অবাক হবেন Banana Fiber হয়তো নতুন আবিষ্কৃত কিছু। না এটা নতুন কিছু নয়। ধারণা করা হয় জাপানের সম্রাট Emperor Tsuchimikado (1198-1210) শাসন আমলে গ্রামের গরিব লোকেরা কিমানো বা কামিশিমো (জাপানের ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় পোশাক) বানানোর জন্য Banana Trees Fiber Facrics তৈরি করে। তবে, ১৩ শতকের শুরু থেকেই পরিপূর্ণ ভাবে পরিধেয় কাপড় এবং অন্যান্য নিত্যপ্র্যয়োজনীয় দ্রব্য তৈরি করতে জাপানের মানুষ কলার আঁশ ব্যবহার করে আসছে।
যেভাবে Banana Trees Fiber তৈরী হয় -
এটি তৈরী করার জন্য কলাগাছের ছাল (খোল) নরম হতে হয়। এ জন্য কয়েকবার ফসল দেওয়া বা গাছে মোচা আসার আগে কাটলে নরম খোল পাওয়া যায় বা পাতা নিয়মিত কাটলেও খোল নরম পাওয়া যেতে পারে ।
তখন ভালো খোল নির্ধারণ করতে হয়। খোল গুলোকে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড বা কষ্টিক সোডা এর দ্রবনে সেদ্ধ করলে উপরিভাগে আশ আলাদা আশ পাওয়া যায়। অবশ্য পাটের মত শুধু পানিতে দু এক মাস ভিজিয়ে রাখলেও কাজ হয়। তাতেও আশ আলাদা হয়ে যায়। তবে কোয়ালিটি অত সুবিধার হয় না ও এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে এই এগুলো দিয়ে মোটা আশ পাওয়া যায়। যেগুলো টেবিলক্লথ সহ নানা ধরনের গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করা যায়।
চাইনিজরা, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালিরা ও ভারতের কোরেলা রাজ্যের লোকেরা অনেক চিকন Fiber ও তৈরী করে মেশিনের মাধ্যমে। কান্ডের ছোট ছোট টুকরোকে মেশিনের সাহায্যে পিষে নরম করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আঁশ ছাড়িয়ে নেয়া হয়। (মেশিনটি হুবুহু আমাদের দেশের গেন্ডারীর রস বানানোর মেশিনের মত)
এরপরে ব্লিচ করে রোদে শুকিয়ে নিলে আঁশগুলোকে অনেকটা রেশম সুতার মত দেখায়।
চাইনিজরা তো ভালো করে প্রসেস করে এটাকে Copy Silk Fiber করে ফেলে। অনেক চাইনিজরা ও একে Banana Silk Fiber ও Fake Silk ও বলে।
এই Fiber ছাড়ানোর ও প্রসেস কাজ করা যায়। এজন্য প্রথমে কলা গাছের বেশ পুরনো কান্ডকে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। পানিতে যখন প্রাকৃতিকভাবে সব ক্লোরোফিল শোষন করে তখন সেলুলোজ আঁশগুলো পড়ে থাকে। এগুলো একত্রিত করে একটি পাল্প তৈরি করা হয় যাতে করে একে সহজে সুতায় রুপান্তরিত করা যায়। এই Fiber নেপালিদের ও কোরেলাদের কাছে পোশাক বোনার জন্য বেশ জনপ্রিয়।
Banana Fiber এর সুবিধা:
-✏ - এই Fiber খুব দ্রুত আদ্রতা শোষণ করতে পারে। তাই উপকূলীয় এলাকায় ও দূর্গত এলাকায় বিশেষ উপোযোগী হবে।
✏- রিং স্পিনিং, ওপেন-এন্ড স্পিনিং সহ সুতা তৈরির প্রায় সব প্রক্রিয়ায় এই Fiber খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়।
- ✏- এই Fiber তুলনামূলকভাবে অন্যান্য Fiber থেকে অনেক শক্ত এবং টেকসই। এটি দেখতেও বেশ উজ্জ্বল Silk এর মতোই এবং ওজনেও অন্যান্য Fiber থেকে হালকা।
- ✏- Eco friendly Fiber তাই সহজেই মাটিতে মিশে যায় এবং এই Fiber ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ধারণ করে না বলে এটি 100% পরিবেশ-বান্ধব ।
- ✏ - মোটা Banana Fiber প্রচলিত তাঁবুর Fiber থেকেও তিনগুণ থেকে পাঁচগুণ মজবুত ও শক্তিশালী হতে পারে।
- ✏- রাসায়নিকভাবে এটি সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ ও লিগনিন দিয়ে গঠিত এবং Dyeing Color ও ভালোভাবে ধরে রাখতে পারে।
-✏- স্থানীয়ভাবেই এর মেশিনারীজ বানানো সম্ভব।
আমাদের দেশের সম্ভাবনাঃ
আমাদের দেশে Banana Fiber গবেষণা শুরু হয় ২০০৬ সালে। প্রথমে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় কাজ শুরু হলেও পরে প্রকল্পটি নিয়ে আসা হয় ময়মনসিংহ শহরে।
প্রকল্পটির প্রধান গবেষক মো. রফিকুল ইসলাম।
গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রফিকুল ইসলাম দেশী প্রযুক্তিতে নিজেই তৈরি করে নেন। ২০০৯-এর মাঝামাঝি জনাব রফিকুল এ আঁশ থেকে কাপড় তৈরিতে সাফল্য পান। ওনার তৈরী যন্ত্রের সাহায্যে খোল থেকে বের করে আনা হয় আঁশ। সেই আঁশ পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে ‘ক্লিন’ করে তৈরি করছেন তুলার রোল। এরপর স্পিনিং মেশিনে ফেলে তৈরি হয় সুতা। সেই সুতাতেই তাঁতের সাহায্যে তৈরি হয় কাপড়। কয়েকটি কানাডীয় প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে এই সুতায় তৈরি পোশাক ক্রয়ের আগ্রহ দেখিয়েছে।
আমি মনে করি সরকারের সদিচ্ছা থাকলে হয়তো আরও অনেক বাজার সৃষ্টি হতে পারে। কারণ এখনকার বায়ার রা Eco Friendly Green Product বেশী পছন্দ করে।
আমাদের দেশের মাটি কলা গাছ চাষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপযোগী।
বর্তমানে যে কোন Natural Fiber এর মূল্য $1.20/Kg এর নিচে নেই। কলা গাছের কোয়ালিটি ভেদে একটি গাছ থেকেই 7 Kg থেকে 18 Kg পর্যন্ত Fiber পাওয়া যেতে পারে।
আর আমাদের দেশের ভালো Textile Investor রা এবং ভালো গবেষক ও Textile Engineer রা এগিয়ে আসলে আরোও ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হবে।
কিন্তু শুধু আমাদের দেশের Spinner দের আবার যে কোন Fiber বিষয় নিয়ে গবেষণাতে প্রচন্ড এলার্জী আছে। তারা ভরসা করে আমদানি নির্ভর Synthetic Fiber ও Cotton Fiber এর উপর। এ জন্যই আমাদের বেশীর ভাগ Textile Industry অন্যান্য দেশের থেকে পিছিয়ে আছে তাই আমাদের Spinner রা বেশীরভাগেই লস প্রজেক্ট। তাই Spinner, Textile Engineer রা এই বিষয়ের প্রতি বিশেষভাবে নজর দিতে পারেন।
Banana Fiber না বানাতে পারলেও আপনি Banana অন্তত খেতে পারবেন, এই নিশ্চয়তা দিতে পারি।
No comments